- গুরু সিয়াগ যোগ (G.S.Y.) মহর্ষি পতঞ্জলির ‘যোগসূত্র’ গ্রন্থে বর্ণিত অষ্টাঙ্গিক যোগের উপর ভিত্তি করে পরিকল্পিত। গুরু সিয়াগ যোগের (G.S.Y.) অনুশীলন এই আটটি অঙ্গেরই অনায়াস এবং সহজ উপলব্ধি ঘটায়।
- ধারাবাহিক অনুশীলনের ফলে মন্ত্রোচ্চারণ ( মানসজপ) স্বয়ংক্রিয় হয়ে যায়। এই ব্যাপারকে ‘অজপা জপ’ বলা হয়ে থাকে। এমন ক্ষেত্রে অনুশীলনকারী দেখেন যে তাঁর নিজের প্রচেষ্টা ছাড়াই ভিতরে ভিতরে মন্ত্রটি অবিরাম উচ্চারিত হয়ে চলেছে।
- যখন অনুশীলনকারী নিরলসভাবে মন্ত্রটি জপ করেন কিংবা যখন তাঁর অজপা জপ শুরু হয়ে যায় তখন তা এক দিব্যধ্বনিতে পরিণত হয়। একে ‘অনাহত নাদ’ বলা হয়। বাহ্যজগতে আমরা দেখি যে, একটি বস্তুর সঙ্গে আরেকটি বস্তুর সংঘাতে ধ্বনি উৎপন্ন হয়। কিন্তু, অনাহত নাদের ক্ষেত্রে এমন কোনো সংঘাত ঘটেনা — এটি ঘাতহীন (অনাহত — নয় আহত বা আঘাতপ্রাপ্ত), বিরামহীন এক ধ্বনি যা সমস্ত জগতে পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে। সাধক তাঁর একটি কানে এটি শুনতে পান এবং এটি তাঁর আধ্যাত্মিক বিকাশের পথে এক বড় বাঁক বদলের সঙ্কেত।
- গুরু সিয়াগ যোগের (G.S.Y.) অনুশীলনকারী সাধনার ফলে অনেক দিব্যশক্তির অধিকারী হয়ে উঠতে পারেন। এই দিব্যশক্তিগুলির অন্যতম হলো — ‘প্রতিভ জ্ঞান’ (সজ্ঞালব্ধ জ্ঞান)। এই জ্ঞান প্রাপ্ত হলে পরে সাধক সীমাহীন অতীত ও ভবিষ্যতের ঘটনাবলী দেখতে-শুনতে পান।
- ধ্যানের সময় অনুশীলনকারী ‘খেচরী মুদ্রা’র অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারেন। এটি এমন এক যৌগিক ক্রিয়া যেখানে সাধকের জিভ পিছনের দিকে গুটিয়ে মুখগহ্বরের তালুতে চাপ দেয় এবং তার ফলে সেখান থেকে দিব্য অমৃতরস ক্ষরণ হয়।এই অমৃতরস দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটায় এবং সাধককে যাবতীয় দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্ত করে।
- গুরু সিয়াগ যোগের (G.S.Y.) অনুশীলন অনুশীলনকারীর প্রবৃত্তির (অন্তর্নিহিত প্রবণতার) রূপান্তর ঘটিয়ে তাঁকে তামসিক (অন্ধতামস, জড় ও নিস্তেজ ভাব) ও রাজসিক (তীব্র আকাঙ্ক্ষাপ্রবণ, কর্মশক্তিপূর্ণ) স্তর থেকে সাত্ত্বিক (ইতিবাচক, পবিত্র, আলোকদীপ্ত) পর্যায়ে উন্নীত করে। প্রবৃত্তির এই পরিবর্তন সুনিশ্চিতভাবে সাধকের ব্যক্তিত্বের পূর্ণাঙ্গ রূপান্তরকে বাস্তবায়িত করে।
- গুরু সিয়াগ যোগে (G.S.Y.) সাধনার পরিণামে সাধক মোক্ষলাভ করেন (জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তিলাভ) এবং তাঁর দিব্য রূপান্তরণ ঘটে যায়।
error: Content is protected !!