(bn) গুরু সিয়াগ যোগ

  • ধ্যানের সময় আপনার স্বচ্ছন্দ ও চাপমুক্ত থাকা প্রয়োজন যাতে জাগ্রত কুণ্ডলিনী বাধাহীন ভাবে আসন, ক্রিয়া, বন্ধ, মুদ্রার মতন নানান যৌগিক ক্রিয়া করাতে পারেন।
  • ধ্যানের সময় আপনার দু-চোখ বন্ধ রাখবেন।
  • দিনের যে-কোনো সময়েই আপনার পছন্দমাফিক স্থানে ধ্যান করতে পারেন। আপনি যে-কোনো দিকেই মুখ করে বসতে পারেন।
  • খালি পেটে অথবা ভারি কিছু খাওয়ার ঘণ্টা দুয়েক বাদে ধ্যান করা যেতে পারে। খাওয়ার পরেপরেই ধ্যানে বসলে ঘুম-ঘুম ভাব আসতে পারে; এমনকি আপনি সত্যি সত্যিই ঘুমিয়েও পরতে পারেন। ধ্যানের ঠিক আগে-আগেই ভারি খাবার খেলে স্বয়ংক্রিয় যৌগিক ক্রিয়া ঘটার সময় আপনার গা-গুলানো বা বমিভাব পেতে পারে।
  • ধ্যানের সময় পুরো ১৫ মিনিট ধরে আপনি যদি আজ্ঞাচক্রে গুরুদেবের ছবিটি কল্পনা করতে না পারেন তাতে বিচলিত হবেন না। চেষ্টা করুন ছবিটিকে মিনিট দুয়েক কল্পনা করতে। এরপরে যদি ছবিটি আপনার মন থেকে মুছে যায়, তখন কেবল আজ্ঞাচক্রে মন রেখে মন্ত্রের মানস-জপ চালিয়ে যান।
  • ধ্যানের সময় নানান চিন্তা মনে আসা একেবারেই স্বাভাবিক ব্যাপার। দিনের যতটা বেশি সময় আপনি মানস-জপ করতে পারবেন, আপনার মন এই আধ্যাত্মিক অনুশীলনে তত বেশি একাগ্র হবে। অর্থাৎ, এর ফলে ধ্যানের সময় বিক্ষিপ্ত চিন্তা কোনো ব্যাঘাত ঘটাবে না। কিন্তু, মনে চিন্তা এলেও ধ্যান থেকে বিরত হবেন না। ধ্যান চালিয়ে যেতে থাকুন, স্বল্প সময় পরে মন বসে যাবে। প্রতিদিন অনুশীলনের ফলে আপনার মনোযোগ বাড়তে থাকবে।
  • ধ্যানের সময় আপনার শরীরে স্পন্দন , মেরুদণ্ডে তড়িৎ প্রবাহের মতন কিছু ছুটে যাবার সংবেদনা, শরীর আগে-পিছে ঝুঁকে পড়া ভূমিতে গড়াগড়ি খাওয়া, দ্রুতগতিতে মাথা নড়া, করতালি, চিৎকার  কাঁদা  হাসা, গান গাওয়া ইত্যাদি নানান অভিজ্ঞতালাভ হতে পারে। এমনকি আপনি উজ্জ্বল আলোক দর্শন, সুগন্ধের ঘ্রাণ, মৃদু ঘণ্টাধ্বনি, ড্রাম বেজে ওঠা কিংবা বজ্রধ্বনিও শুনতে পারেন। দু-একটি বিরলতম ক্ষেত্রে কেউ কেউ বন্যা অথবা ভূমিকম্পের মতো ভয়াল দৃশ্যও দেখে থাকেন। এসব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলে খুশি কিংবা ভয়ের উত্তেজনায় ধ্যানভঙ্গ করবেন না। দিব্যশক্তি কুণ্ডলিনী আপনার দেহ-মনের মলিনতা দূর করতে এবং রোগব্যাধি বা নেশাগ্রস্ততা ইত্যাদি থেকে আপনাকে মুক্ত করতেই এই অভিজ্ঞতাগুলি দিয়ে থাকেন। এবং এভাবেই আপনার আধ্যাত্মিক প্রগতি সুনিশ্চিত করেন।
  • যদি আপনার এমনতর অনুভূতিলাভ অথবা যৌগিক ক্রিয়ার অভিজ্ঞতা না ঘটে থাকে, তবুও ধ্যান ছাড়বেন না। এগুলির অনুপস্থিতির অর্থ এই নয় যে আপনার উন্নতি হচ্ছে না। কখনও কখনও নিয়মিত অনুশীলনে কিছু দিন অথবা কয়েক মাসের পরে এই অভিজ্ঞতাগুলি আসতে থাকে। মনে রাখবেন যে, দিনে অন্তত দুবার ধ্যানই উন্নতির আসল চাবিকাঠি ।
  • মন্ত্রজপ ছাড়া ধ্যানের কোনোই উপকারিতা নেই। ধ্যানের সময় মন্ত্রজপ অবশ্যই করতে হবে।
  • সারাদিন ধরেই মন্ত্রজপ করা প্রয়োজন। অর্থাৎ, প্রাত্যহিক বা দৈনন্দিন কাজকর্মের মধ্যেই, যেমন — দাঁত মাজা, দাঁড়ি কামানো, স্নান, চারবেলা আহারের সময়, বাসে, ট্রেনে, গাড়িতে কর্মস্থলে যেতে যেতে এবং অফিসে কাজের সময়, কিংবা ফিল্ড সাইট পরিদর্শনকালে এমনকি বাড়িতে টি.ভি. দেখার সময়েও মন্ত্রজপ চালিয়ে যেতে হবে। সহজকথায় যতটা সম্ভব অবিরাম মন্ত্রজপ করে যাওয়া দরকার।
  • কারোর সঙ্গে কথা বলার মুহূর্তে মন্ত্রজপ চালিয়ে যাওয়া কঠিন মনে হলে কথোপকথন শেষ হওয়া মাত্রই আবার মন্ত্রজপ চালু করুন।
  • যেহেতু নিরুচ্চারে নীরবে, মনে-মনে জিভ ও ঠোঁট না নড়িয়েই মন্ত্রজপ করতে হয়, তাই এতে সামাজিক স্বাচ্ছন্দ্য ব্যাহত হওয়ার কোনো প্রশ্নই নেই। ঘরে, বাইরে, অফিসে আপনার মন্ত্রজপ কারোরই বিরক্তির কারণ ঘটাবে না।
  • এইরকম অবিরামভাবে চার-পাঁচ সপ্তাহ ধরে মন্ত্রজপ ক’রে যেতে পারলেই তা স্বয়ংক্রিয় হয়ে উঠবে। একে বলে ‘অজপা জপ’ — অর্থাৎ, যেখানে অনুশীলনকারীর কোনো প্রচেষ্টা ছাড়াই মন্ত্রজপ ঘটে যেতে থাকে। এই স্তরে পৌঁছালে আপনাকে আর মন্ত্রজপ করতে হয় না; আপনার হয়ে গুরুই সেই দায়িত্ব নেন।
error: Content is protected !!