(bn) গুরু সিয়াগ যোগ

প্রশ্ন: গুরুদেবের থেকে মন্ত্রদীক্ষা নেওয়ার পরেই কি আমার ব্যাধি সেরে যাবে?

শুধুমাত্র গুরু সিয়াগের থেকে মন্ত্রদীক্ষা গ্রহণই যথেষ্ট নয়। রোগমুক্তির জন্য অনুশীলনকারী অবশ্যই সারা দিনব্যাপী ওই দিব্যমন্ত্রের মানস-জপ এবং দিনে দুবার ১৫ মিনিট করে ধ্যান করবেন। নিয়মিত, ধারাবাহিক অনুশীলনই দ্রুত আরোগ্যের মূল চাবিকাঠি । যেহেতু গুরু সিয়াগ যোগ (G.S.Y.) সামগ্রিক নিরাময় ঘটায়, তাই রাতারাতি সুফল মেলে না। একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে ধাপে ধাপে দেহ সুস্থ হতে থাকে। সুতরাং, সাধককে অবশ্যই ধৈর্য রাখতে হবে এবং হাতে হাতে ফল মিলল না বলেই হতাশ হওয়া চলবে না।  কয়েকটি ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে অনুশীলনকারী কয়েকদিনের অনুশীলনেই সেরে উঠেছেন। দেখা গেছে যে, এই রোগগ্রস্ত শিষ্যেরা যাঁরা অন্য সব উপাসনা এবং ধর্মীয় আচার ছেড়ে একমাত্র গুরু সিয়াগ যোগেরই (G.S.Y.) অনুশীলন করেছেন, ওষুধ নেওয়া বন্ধ করেছেন এবং একান্তমনে গুরু সিয়াগের কাছেই নিরাময়ের জন্য প্রার্থনা জানিয়েছেন।

প্রশ্ন:- যেহেতু এখন আমি গুরু সিয়াগ যোগের (G.S.Y.) অনুশীলন করি, সেক্ষেত্রে আমি কি ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলব?

দুটি ক্ষেত্রে রোগীকে অবশ্যই ওষুধ খেয়ে যেতে হবে:-

(a) যেখানে রোগী এতটাই দুর্বল যে তাঁর সচেতনভাবে মন্ত্রজপ ও ধ্যান করবার সামর্থ্য নেই। ধারাবাহিক অনুশীলনের জন্য দেহে প্রয়োজনীয় শক্তি না আসা পর্যন্ত ওষুধ অবশ্যই খেয়ে যেতে হবে।

(b)  গুরু সিয়াগ যোগের ব্যাপারে রোগীর সম্পূর্ণ বিশ্বাস না থাকলে।

বিশ্বাসের অভাব ঘটলে রোগগ্রস্ত ব্যক্তি সর্বদাই হয় এই অনুশীলন ছেড়ে দেবার ছুতো খুঁজবে নতুবা এমনটা ভাববে যে গুরু সিয়াগ যোগ (G.S.Y.) অনুশীলনের ফলেই তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটেছে। এইসব ক্ষেত্রে গুরু সিয়াগ যোগে (G.S.Y.) দৃঢ় বিশ্বাস না আসা পর্যন্ত এবং নির্ভয়ে ওষুধ বন্ধ করতে না পারা পর্যন্ত ওষুধ খাওয়াই বিধেয়।

বিশেষ দ্রষ্টব্য :- গুরু সিয়াগ কখনওই তাঁর শিষ্যদের চিকিৎসা ব্যবস্থার সুযোগ গ্রহণ করতে নিরুৎসাহিত করেন না। তিনি ওষুধের ওপরে তাদের যতটা বিশ্বাস যোগের ওপরেও ততটাই বিশ্বাস স্থাপন করতে বলেন। তাঁর মতে গুরু সিয়াগ যোগ (G.S.Y.) অন্তরের ও বাইরের সেতুবন্ধনে সহায়তা করে — “আমি আপনাদের এমন এক প্রক্রিয়া শেখাবো যাতে ভিতরের চিকিৎসক জেগে ওঠে । আমি রোগী  এবং ডাক্তার দুজনকেই বলি বাইরের চিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে চলতে — আমি কখনওই বিজ্ঞানকে অস্বীকার করি না। বিজ্ঞান সত্য, কিন্তু, তা এখনও অসম্পূর্ণ । আলেকজাণ্ডারের গুরু এরিস্টটল তাঁর সময়ের এক মহান বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি বলেছিলেন বিজ্ঞান হলো অসম্পূর্ণ দর্শন ; অপরদিকে দর্শন কিন্তু পূর্ণাঙ্গ  বিজ্ঞান। যোগদর্শনও একটি সম্পূর্ণ বিজ্ঞান। বিজ্ঞান দর্শনের সহায়ক মাত্র। আমি কখনও বিজ্ঞানের বিরোধিতা করিনি। কিন্তু, আমি এ কথা বলি যে, আপনার অন্তরে একজন চিকিৎসক আছেন। ভিতরের সেই চিকিৎসক বাইরের ডাক্তারকে পথ দেখায় এবং শেষোক্ত জনের জ্ঞানের পরিসীমা সেটুকুই । এই ভিতরের ডাক্তারের অনেক কিছু দেবার আছে। আমি শুধুমাত্র এই ভিতরের ডাক্তারের সঙ্গে আপনার পরিচয় করিয়ে দিই। এরপর তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব জমিয়ে তোলা আপনার কাজ। তার মানে হলো, যে মন্ত্র আমি দেব, তা আপনাকে ক্রমাগত জপ করে যেতে হবে।”

error: Content is protected !!