(bn) গুরু সিয়াগ যোগ

‘সমর্থ’ শব্দের অর্থ ‘শক্তিমান’ বা ‘পারঙ্গম’ এবং ‘সদ্গুরু’ অর্থে সত্যিকারের গুরু। ঐশ্বরিক শক্তিসম্পন্ন গুরু যিনি দীক্ষিত শিষ্যকে তাঁর আধ্যাত্মিক সাধনায় পথ দেখিয়ে নিয়ে চলে ক্রমে আত্মসাক্ষাৎকারের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পারেন তিনিই’ সমর্থ সদ্গুরু’ অভিধার যোগ্য। এরকম গুরুই শিষ্যকে মন্দিরে- তীর্থে কিংবা নানান আচার-বিচার, কৃত্যাকৃত্য, ধর্মানুষ্ঠান, অর্থহীন তর্ক ও উপদেশের গোলোকধাঁধায় বৃথা না ঘুরিয়ে একেবারে সোজাসুজি, কার্যকর পথে ঈশ্বরোপলব্ধিতে পৌঁছে দিতে পারেন। সমর্থ সদগুরু শিষ্যের ওপর কোনো বাধা-নিষেধ আরোপ করেন না। সূর্যের মতোই সমর্থ সদগুরুও সমগ্র বিশ্বকেই আলোকিত করেন। তিনি শিষ্যকুলের মধ্যে কোনোরকম তারতম্য করেন না কিংবা তাঁদের অতীত ও বর্তমানের আচার-আচরণ, ধর্ম, লিঙ্গ, জাতি, যৌন আসক্তি কিংবা সামাজিক প্রতিপত্তির নিরিখে তাঁদের বিচারও করেন না। সমর্থ সদগুরুর ঐশ্বরিক শক্তি স্থান-কালের সীমিত গণ্ডিকে অতিক্রম করে যায়।বিশ্বের যে-কোনো প্রান্তে থাকা যে কেউই গুরু সিয়াগ যোগের (G.S.Y.) মন্ত্র-ধ্যানের  আন্তরিক অনুশীলনের মধ্য দিয়ে গুরু সিয়াগের আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয়ে রূপান্তরণের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারেন।

বাইরে থেকে যেমনটা দেখা যায়, গুরু কিন্তু তেমন কেবলমাত্রই একটি দৈহিক বা শারীরিক সত্তা নন। তিনি আমাদের সকলের অন্তরেই আছেন। গুরু সিয়াগ যেমন বলেন, “কে গুরু ? গুরু এই নশ্বর দেহবিশিষ্ট একজন ব্যক্তিমাত্র নন। তাঁর নশ্বর দেহ একদিন লয় ও ক্ষয়প্রাপ্ত হবে; কিন্তু, গুরু — যিনি ঐশ্বরিক শক্তি — তাঁর মৃত্যু নেই। তিনি শাশ্বত ও চিরন্তন। সাধকের অভ্যন্তরে গহনে গুরু বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হন। আমাদের যোগবিজ্ঞানে স্থান-কালের কোনো মূল্য নেই। আপনি আমার অন্তরে এবং আমিও আপনার অন্তরে। যখনই আপনি স্মরণ করবেন তখনই আপনার অন্তরে আপনি আমাকে পাবেন। সত্যিকারের গুরু যিনি তিনি সর্বত্র বিরাজমান (তিনি একই সঙ্গে সর্বত্র বর্তমান থাকেন ; স্থান-কালের গণ্ডীদ্বারা তিনি আবদ্ধ নন )।”

“আপনারা যখনই আমার কথা শুনছেন আপনারা আমার শক্তি আত্মীকৃত করছেন। আমার কণ্ঠস্বর, চোখ এবং প্রতি রোমকূপ দিয়ে দিব্য, চেতন শক্তি নির্গত হচ্ছে। যতদিন এই শরীর থাকবে, ততদিন এই শক্তি নির্গত হতে থাকবে। আপনি নিরক্ষর হতে পারেন, অনেক দূরে থাকতে পারেন কিংবা তীব্র যন্ত্রণায় জর্জরিত হতে পারেন– কিন্তু, যদি আপনি প্রার্থনা করেন যে — “আমায় সাহায্য করুন” — সেই প্রার্থনার শক্তিই আমার কাছে পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট। বারংবার  নতজানু হবার, অনুরোধ-উপরোধ করার কিংবা উপঢৌকন দেবার কোনোই প্রয়োজন নেই।”

error: Content is protected !!