১৯৮৩-র ৩১শে ডিসেম্বর, ভোর ৫টায় সমগ্র উত্তর-পশ্চিম ভারত এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। গুরুদেব পরে জেনেছিলেন , ঠিক ঐ মুহূর্তেই বাবা গঙ্গাইনাথজি তাঁর দেহত্যাগ করেন। অনেক বছর বাদে শিষ্যদের সঙ্গে কথোপকথনের সময় এ ঘটনা প্রসঙ্গে গুরুদেব বলেছিলেন – ” কখনও কখনও কোনো মহাপুরুষের নশ্বর দেহত্যাগের ঘটনায় ধরিত্রী পর্যন্ত কম্পিত হয়! এভাবেই প্রকৃতি তাঁর শোক প্রকাশ করে থাকে।”
এই ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যেই গুরুদেব একদিন যখন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন –এলাকারই এক তরুণ তাঁকে ডাকলেন। তিনি গুরুদেবকে যা বললেন– তা শুনতে বড়ই অদ্ভুত! সেই যুবকের কথা অনুযায়ী বাবা গঙ্গাইনাথজি নাকি গুরুদেবকে জামসরের সমাধিস্থলে যাওয়ার ব্যাপারে এই যুবককে উপুর্যুপরি বলতে বলছেন। এর প্রত্যুত্তরে গুরুদেব যখন বললেন যে , বাবা যেহেতু আর জীবিত নেই ,ফলে , তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎলাভ তো সম্ভবই নয় কখনও — তখন যুবকটি বললেন যে , বাবা স্বপ্নে তাঁকে এই আদেশ দিয়েছেন। এই আহবান শুনে বাবার সমাধিক্ষেত্র দর্শন ও প্রার্থনা নিবেদনের জন্য গুরুদেব সেখানে গেলেন।
বৈদিক চিন্তনের একটি মূল নীতি অনুযায়ী, ব্যক্তির মৃত্যু ঘটলে দেহ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় ঠিকই; কিন্তু, আত্মা চিরন্তন — তার কোনো বিনাশ নেই। চেতনার আলোকদীপ্তিহীন সাধারণ একজন মানুষ যেখানে তাঁর সঞ্চিত কর্মফলের পরিণামে মারা যায় , সেখানে চেতনাদ্দীপ্ত মহাপুরুষ একটি সুনির্দিষ্ট স্থানে-কালে স্বেচ্ছায় সচেতনভাবে দেহত্যাগ করেন। এহেন সিদ্ধগুরু তাঁর মরদেহ ত্যাগের পরেও তাঁর শিষ্যদের পথ দেখিয়ে চলেন। সেকারণেই একজন সন্তের সমাধিস্থল দিব্য আশীর্বাদের অফুরান ধারার উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়।