পরিণত বয়সে পৌঁছে বেশিরভাগ মানুষই তাঁদের শৈশব বা কৈশোরের স্মৃতি রোমন্থন করেন। ফেলে আসা শৈশবকে সকলেরই মধুর এবং নির্ভার বলে মনে হয়। প্রাপ্তবয়স্করা অনেকসময়েই শিশুদেরকে ছেলেবেলা চুটিয়ে উপভোগ করে নেবার উপদেশ দেন এইজন্য যে,এটাই জীবনের একমাত্র সময় যা ভবিষ্যতের চিন্তার ভারে ভারাক্রান্ত নয়। যদিও, এটি সম্পূর্ণ সত্য নয়।শিশুরা পরিণত মানুষের মতন সকল ক্রিয়াকর্মের কার্যকারণ বিচার করতে পারে না অথবা ভবিষ্যতে তাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে তা ভাবতে পারেনা ঠিকই, কিন্তু, তাদেরও নিজস্ব অনেক সমস্যা আছে — যেমন পড়াশোনার চাপ, সমবয়সী বন্ধুদের চাপ, পরিণতবয়স্ক ব্যক্তিদের তাদের প্রতি আচরণ, সামাজিক পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং আশা-আকাঙ্ক্ষার মতোই আরও নানাবিধ চাপ।
এই চাপ শিশুদের আচরণে, খাদ্যাভ্যাসে, দৈহিক বিকাশে, স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে, স্কুলে দক্ষতার বহিপ্রকাশে এবং অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে তাদের ব্যবহারে প্রতিকূল প্রভাব ফেলে। গুরু সিয়াগ যোগ (G.S.Y.) শিশুদের ওপর এইসমস্ত সমস্যার নেতিবাচক প্রভাব নিরাময় করে এবং তাদের সুপ্ত গুণাবলী ও প্রতিভার বিকাশ ঘটায়।
গুরু সিয়াগ যোগ (G.S.Y.) ধ্যান ও মন্ত্রজপ নির্ভর এক অতি সহজ অনুশীলন যাকে সহজেই শিশুর স্কুল এবং গৃহের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যেতে পারে । এই অনুশীলনে গুরুপ্রদত্ত মন্ত্রের নীরব জপ এবং দুবেলা ১৫ মিনিট করে ধ্যান করতে হয়। নিয়মিত অনুশীলনের ফলে গুরু সিয়াগ যোগ (G.S.Y.) নিম্নলিখিত উপায়ে শিশুদের উপকারে আসে-
চাপমুক্তি (Reduces Stress) :- একটি বহুপ্রচলিত অথচ ভ্রান্ত ধারণা হলো– ধ্যান করবার অর্থ চিন্তাশূন্য হয়ে যাওয়া। যদিও প্রকৃতপক্ষে ধ্যান মনকে শান্ত করতে সহায়তা করে। একটি উদাহরণ সহযোগে বিষয়টি বোঝা যেতে পারে — এক গ্লাস পরিষ্কার , স্বচ্ছ জলে বেশ খানিকটা কাদা গুলে দেওয়া হলো। নোংরা ময়লাগুলি বেশ কিছুক্ষণ গ্লাসে ঘুরপাক খাবার পর ধীরে ধীরে তলায় থিতিয়ে পড়বে। অল্প সময় পরেই আবার পরিষ্কার জল দেখা যাবে। প্রায় একইরকমভাবে যখন কেউ ধ্যান করে তখন কিছুক্ষণের জন্য চিন্তাগুলি মনের চারদিকে ঘুরপাক খেতে থাকে। অনুশীলনকারীকে এ-সময় মন্ত্রজপে মনোনিবেশ করতে হয়। অল্পক্ষণের মধ্যেই চিন্তাগুলি থিতিয়ে গেলে মন শান্ত হয়ে যায়। মন যখন শান্ত হয়ে যায় , তখন সারা শরীরে সেই শান্তভাবের প্রভাব পড়ে এবং তৎক্ষণাৎ চাপ কমতে থাকে।
পড়াশোনার দক্ষতা বৃদ্ধি করে (Improved Academic Performance) :- মন চাপমুক্ত হলে স্বাভাবিকভাবেই সজাগতা বাড়ে এবং মনোসংযোগ গভীর হয়। গুরু সিয়াগ যোগের (G.S.Y.) অনুশীলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের কঠিন বিষয়কেও অতি সহজেই আয়ত্ত করতে পারার দক্ষতা বৃদ্ধি পায় । মনোসংযোগ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে পাঠ তৈরি এবং তা মনে রাখাও অনেক দ্রুত ও সহজ হয়ে যায়।
উদবেগ ও অবসাদ নিরসন করে (Reduced Anxiety and Depression) :- মাঝেমাঝেই আমরা পড়াশোনায় ব্যর্থ হওয়ার ভয়ে ছাত্রছাত্রীদের আত্মহত্যা করতে দেখি। অথচ, স্কুল- কলেজে যদি ধ্যানের জন্য ১৫ মিনিট সময়ের অবকাশ থাকতো তাহলেই এই করুণ পরিণতিকে এড়ানো সম্ভব হতো। যেসব ছাত্র-ছাত্রী গুরু সিয়াগ যোগ (G.S.Y.) অনুশীলন করে তারা পরীক্ষার চাপ এবং কৃতকার্যতার উদবেগকে অনেক ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারে। পরীক্ষার আগে কিংবা পড়তে বসার আগে ধ্যান করতে পারলে দেহ-মন শান্ত হয়ে আসে এবং বিষয়ে মনোনিবেশ করা সহজ হয়। গুরু সিয়াগ যোগ ( G.S.Y.) তাদের মানসিক ভারসাম্যকে সুদৃঢ় করে — ফলে, ব্যর্থতার মুখোমুখি দাঁড়িয়েও অনুশীলনকারী ছাত্র শান্তভাবে পরিস্থিতির বিচারে সক্ষম হয় এবং ভেঙে পড়া বা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ার বদলে তারা নিজেদেরকে আরও ভালো ফলাফলের জন্য যোগ্য করে তোলে।
উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তির বিকাশ (Out-of-the-box Ideas):- গুরু সিয়াগ যোগ (G.S.Y.) সৃজনশীল চিন্তাশক্তিকে উদ্দীপ্ত করে। ফলে, ছাত্র-ছাত্রীদের মনে মহৎ ধ্যান-ধারণার জন্ম হয়। বিশেষত, যে-সকল ছাত্র-ছাত্রী গবেষণা, উদ্ভাবন বা ডিজাইনিং-এর মতো সৃজনশীল কাজে নিজেদের নিয়োজিত করতে চায়, তাদের জন্য এটি ভীষণই জরুরি।
সুখী মানসিক অবস্থা (Happier State of Mind) :- গুরু সিয়াগ যোগ (G.S.Y.) ছাত্রদের সামগ্রিক ব্যক্তিত্বের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তারা অনেক নিশ্চিন্ত ও সুখী বোধ করে। অনেক ছাত্র-ছাত্রীর জীবনেই গুরু সিয়াগ যোগ (G.S.Y.) আশাবাদের সঞ্চার ও বৃদ্ধি ঘটিয়েছে । জীবনে নানান চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় কিংবা নতুন কোনো বিদ্যাশৈলী আয়ত্ত করতে এই অনুশীলন বিশেষভাবে সহায়ক হয়েছে।বন্ধুদের আচরণে শিশু ক্রমশ যদি আগের তুলনায় কম বিপন্নতা অনুভব করে কিংবা তার নিজের উগ্র ব্যবহার যদি কমে আসে তবে তাও তার মানসিক সুখকেই প্রতিফলিত করে। ক্রমে তারা তাদের চারপাশের মানুষজনের প্রতি সমানুভূতি পোষণ করতে শেখে ফলে তাদের সামাজিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের উন্নতি ঘটতে থাকে।
চিন্তনশক্তির বিকাশ ঘটায় (Promotes Evolved Thinking) :- অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হবার সঙ্গে সঙ্গে তারা অপরের প্রয়োজন অনুধাবন এবং তার পূরণের ব্যাপারে অনেক বেশি যত্নবান হয়। বহু সময়েই অসহায়, ভাগ্যবিড়ম্বিতদের তারা নিজেদের অধিকার ছেড়ে দিয়ে কিংবা নিজেদের পছন্দের জিনিস দিয়েও সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। নিজের প্রতি কিংবা বন্ধুর প্রতি কোনোরকম অন্যায় অথবা পীড়ন দেখামাত্রই তারা এগিয়ে এসে তার পাশে দাঁড়ায় ও প্রতিবিধান করে।