মানবের যাবতীয় রোগব্যাধিকে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান দুটি বড় ভাগে বিন্যস্ত করেছেন– শারীরিক ও মানসিক । বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে কিংবা থেরাপির মধ্য দিয়ে সে সবের চিকিৎসা করা হয়। ভারতবর্ষের প্রাচীন মুনি-ঋষিরা ধ্যানের মাধ্যমে মানব জীবনের অজ্ঞাত রহস্যগুলির উদ্ঘাটন করতে চেয়েছেন। তারা অনুধাবন করেছিলেন যে মনুষ্য দেহের অধিকাংশ রোগব্যাধিই প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তির পূর্বজীবনের কৃতকর্মের ফল। কেবলমাত্র রোগজীবাণুদের সংস্পর্শে আসাই এর এক মাত্র কারণ নয়, যেমনটি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান মনে করে। এ জীবনে হোক বা পরবর্তী জীবনে — ব্যক্তির প্রতিটি কাজই একেকটি প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। প্রতিটি মানুষই যেহেতু জন্ম-মৃত্যুর অনিঃশেষ চক্রের মাঝে পড়ে গেছে, সেহেতু জীবনে রোগভোগ এবং উত্থানপতন ক্রমান্বয়ে চলতেই থাকে। অন্যভাবে বললে — আধ্যাত্মিক কর্মফলবাদ — অর্থাৎ, পূর্বজীবনের কৃতকর্মের ফলশ্রুতিতে বর্তমান জীবনে রোগব্যাধি বা দুঃখভোগই — একজনম থেকে আরেক জনমে অনিঃশেষ চক্রের মতোই মানুষের জীবনকে চালনা করে।
যৌগিক শাস্ত্র অনুসারে পূর্ব পূর্ব জন্মের সংস্কার (অন্তঃশায়ী প্রবণতা ও অভ্যাসের বীজ) এবং বর্তমান জীবনের কর্ম আমাদের জীবনের গতি স্থির করে।মহর্ষি পতঞ্জলি তাঁর সুপ্রাচীন গ্রন্থ ‘যোগসূত্র’-এ রোগব্যাধিকে তিনিটি ধারায় বিন্যস্ত করেছেন — শারীরিক (আধিদৈহিক), মানসিক (আধিভৌতিক) এবং আধ্যাত্মিক । সদ্গুরুর কাছে আশ্রয় নিয়ে এবং নিয়মিত সিদ্ধযোগের সাধনার অনুশীলনের মাধ্যমে যে-কেউ এই ত্রিবিধতাপ থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করতে পারেন। গুরু সিয়াগের কথায় — “সারা পৃথিবী জুড়েই যোগের নামে এখন শারীরিক কসরৎ প্রদর্শিত হচ্ছে। আমি যখন আমেরিকায় গিয়েছিলাম তখন সেখানেও দেখেছি, যোগ বলতে শারীরিক ব্যায়ামকেই বোঝানো হয়। কিন্তু, বৈদিক দর্শনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী যোগের লক্ষ্য হলো মোক্ষলাভ অর্থাৎ, জন্ম-মৃত্যুর পুনরাবর্তন থেকে মুক্তি। প্রকৃতপক্ষে, বৈদিক দর্শন একেবারেই রোগব্যাধির কথা বলে না। যেমন পতঞ্জলির যোগদর্শনের ১৯৫ টি সূত্রের কোনোটিতেই রোগব্যাধির প্রসঙ্গ নেই। এই দর্শন বরং, বিগত জন্মগুলির সংস্কারকে ধ্বংস করে ফেলার উপায়ের কথা বলে।”
গুরু সিয়াগের মতন সমর্থ আধ্যাত্মিক গুরুর অভিভাবকত্বে নিয়মিত যোগের অনুশীলনের মধ্য দিয়ে একজন তাঁর যাবতীয় দুঃখের আধ্যাত্মিক সমাধান পেতে পারেন। গুরু সিয়াগ যোগের (G.S.Y.) অনুশীলন একজন শিষ্যকে অতীতের কর্মজাল কাটাতে, রোগব্যাধি থেকে মুক্ত হতে এবং আত্ম-সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে তাঁর জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য অনুধাবন করতে সাহায্য করে।