(bn) গুরু সিয়াগ যোগ

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বক্তব্যে গুরুদেব এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৯৯৯ সালে দেওয়া বক্তৃতা। এখানে উনি ‘যোগ কী — সিদ্ধযোগের ইতিহাস ও কার্যকারিতা’র বিষয়ে বলেছেন। একেবারে শেষে আছে যুবসম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে গুরুদেবের বার্তা এবং কেমনভাবে তারা যোগের মাধ্যমে রূপান্তরণকে সংঘটিত করবে সে-কথা। যোগের সত্যিকারের সংজ্ঞা কি হওয়া উচিত সে ব্যাপারে মতামত দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন মহর্ষি পতঞ্জলি তাঁর যোগসূত্র গ্রন্থের দ্বিতীয় সূত্রেই যোগকে “মনের অন্তর্নিহিত বৃত্তিসমূহের নিরোধক” বলে চিহ্নিত করেছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত মনের চঞ্চলতা শান্ত ও স্থির না হচ্ছে ততক্ষণ সাধকের পক্ষে ধ্যান কিংবা যোগের অর্থাৎ পরমসত্তার সঙ্গে একাত্মতার অনুভূতি লাভ করা সম্ভব নয়। যে সিদ্ধ যোগের কথা আমি বলছি তাতে গুরুই নিজের আধ্যাত্মিক শক্তিতে শিষ্যের মনের ছুটোছুটি, বিক্ষিপ্ততা রোধ করেন, তাকে শান্ত এবং চিন্তাশূন্য করেন।”

“যোগ পরম্পরায় আমরা যে নাথ সম্প্রদায়ের অনুসরণ করি তা নয়জন মহান নাথযোগী সন্ন্যাসীর দ্বারা পরিচালিত। এই মহতী গুরু পরম্পরায় কলিকালের সূচনায় মৎস্যেন্দ্রনাথই আদিগুরু রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন।”

“গোরক্ষনাথজী ছিলেন মৎস্যেন্দ্রনাথের শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম। গোরক্ষনাথজী বেদকে কল্পতরুর (পুরাকথার ইচ্ছাপূরণকারী বৃক্ষ) সঙ্গে তুলনা করেছিলেন এবং যোগকে সেই বেদরূপী কল্পতরুর অমৃতফল রূপে বর্ণনা করেছিলেন। সিদ্ধযোগের অনুশীলন সাধককে ত্রিবিধতাপ (যথা শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক) থেকে মুক্ত করে। এই তিন বৃহৎ সীমানার বাইরে দুঃখের আর কোনো অস্তিত্ব নেই। সিদ্ধ যোগের অনুশীলন অসংখ্য ব্যক্তিকে যাবতীয় রোগব্যাধি থেকে মুক্ত করেছে।”

“ত্রিবিধতাপ দূরীকরণের মাধ্যমে ব্যক্তির এই রূপান্তরণ বস্তুত একটি সুনির্দিষ্ট দর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এটি কারোর সৃজনাত্মক কল্পনার মিথ্যা উদ্ভাবন নয়। আমি জানি যে, যৌগিক দর্শনের ব্যাখ্যায় কেউ কেউ কাল্পনিকতার আশ্রয় নেন, কেননা, তাদের সমস্ত উপদেশই নিতান্তই পুঁথিগত এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা বর্জিত। কোনো কোনো ‘গুরু’ এমন কথাও বলেন যে, ২০ বছর অভ্যাসের ফলে সাধকের কুণ্ডলিনী জাগ্রত হওয়া সম্ভব! এক্ষেত্রে আমার বক্তব্য — “গুরু এবং শিষ্য যে পরবর্তী ২০ বছর বেঁচে থাকবেন তার কী কোনো নিশ্চয়তা আছে? ২০ বছর ধরে কোনো কিছুর জন্য কেন লড়াই করবে যখন তুমি তা আজই পেতে পার? এখানে, এইমুহূর্তেই আধ্যাত্মিক সচেতনতা অর্জন করবে না কেন? ২০ বছর অপেক্ষার কথা একেবারেই বাজে ব্যাপার ।”

error: Content is protected !!