১৯৮৪ সালে গুরুদেব আরেক বিচিত্র ঘটনার সম্মুখীন হলেন, যার গূঢ় তাৎপর্য হয়তো আগামী সময়ে মানবজাতিকে প্রভাবিত করবে। একদিন রাত্রে বিছানায় শুতে যাবার পর গুরু সিয়াগ স্বপ্নে এক দৃশ্য দেখলেন। তাঁর অস্পষ্ট ধারণা হলো যে, একটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থের একটি নির্দিষ্ট অনুচ্ছেদ তিনি স্বপ্নে দেখছিলেন এবং সে-সময়একটি কণ্ঠ তাঁকে বলছিল — ” দাউ আর্ট দ্যাট, দাউ আর্ট দ্যাট” ( তুমিই সেই, তুমিই সেই)।পরেরদিন সকালে উঠে তিনি ভাবতে চেষ্টা করলেন যে, এটা কি নিছকই একটা স্বপ্ন, নাকি কোনো দর্শন? “দাউ আর্ট দ্যাট” – কথাটিরই বা মানে কী? যেহেতু, অনুচ্ছেদটি হিন্দিভাষায় স্বপ্নে দেখেছিলেন , তাই ঐ অনুচ্ছেদের কয়েকটি শব্দও তাঁর মনে ছিল — কিন্তু, সেসবের কোনো অর্থ তিনি খুঁজে পাচ্ছিলেন না।
দিন দুয়েক বাদে গুরুদেবের কনিষ্ঠ পুত্র রাজেন্দ্র একটি পুরোনো পাতামোড়া বই বাড়ি নিয়ে এলেন। রাস্তার ধারের একটি বাড়িতে বইটিকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্কুলছাত্র রাজেন্দ্র বইটির প্রতি এমনই এক দুর্মর টান অনুভব করেছিলেন যে সেটি তুলে না নিয়ে পারেননি।উদ্দেশ্যহীনভাবে গুরুদেব বইটির পাতা ওল্টাতেই একটি পৃষ্ঠায় একটি অনুচ্ছেদে তাঁর দৃষ্টি আটকে গেল। এটা ছিল হুবহু স্বপ্নে দৃষ্ট ঐ অনুচ্ছেদটি । কয়েকদিন ধরে বইটি বারংবার পড়েও গুরুদেব বইটির বিষয় অনুধাবন করতে পারলেন না। কেবল এটুকুই বোঝা গেল যে , বহু চিত্রবিশিষ্ট ঐ বইতে সরল ভঙ্গিমায় ছোটোদের জন্য খ্রিষ্ট ধর্মের বিশ্বাসের কথা তুলে ধরা হয়েছে। তথাকথিত অর্থে ‘ধার্মিক’ না হবার কারণে হিন্দু শাস্ত্রগ্রন্থের সঙ্গেই গুরুদেবের বড় একটা পরিচিতি ছিল না — অন্যান্য ধর্মবিশ্বাসের বিষয় তো তাঁর ধারণা ছিল যৎসামান্য ।
নিজের পরিচিত মহলে গুরুদেব জিজ্ঞাসা করলেন যে, ধর্মসম্প্রদায় হিসেবে হিন্দুরা যেমন ‘ভগবদ্গীতা’র অনুসরণ করে থাকেন, তেমনি খ্রিষ্টানদেরও কোনো অনুসরণযোগ্য গ্রন্থ আছে কিনা? সেই প্রথম তিনি বাইবেল সম্পর্কে জানতে পারলেন। আরও জানতে পারলেন যে, তাঁর স্বপ্নদৃষ্ট পবিত্র গ্রন্থের ঐ অনুচ্ছেদটি ‘গসপেল অফ জন’-এর একটি অংশবিশেষ, ১৫ঃ২৬-২৭ এবং ১৬ঃ৭-১৫ অধ্যায়। পরে গুরুদেবেরএক বন্ধু তাঁকে বাইবেলের একটি সংক্ষিপ্ত হিন্দি-সংস্করণ উপহার দিয়েছিলেন। তা থেকে খ্রিষ্টান ধর্ম বিষয়ে গুরুদেবের সামান্য ধারণা গড়ে উঠেছিল।
স্থানীয় ল-কলেজের এক অধ্যাপক বন্ধুর সূত্রে তিনি একটি ইংরাজি বাইবেল জোগাড় করলেন। কিন্তু, এতেও খুব একটা সুবিধে হলো না, কেননা, যে অনুচ্ছেদটি তিনি খুঁজছিলেন, সেটি এখানে পেলেন না। গুরুদেব বইটি ফেরত দিয়ে হাল ছেড়ে দিলেন এই ভেবে যে — ঘটনাটি চুকেবুকে গেছে। কিন্তু, তা হওয়ার নয়। বরং, তাঁর অন্তরের তাগিদ আরও প্রবল হয়ে উঠল। আরও একবার সন্ধান করতে গিয়ে তিনি জানতে পারলেন যে, খ্রিষ্ট ধর্মও অনেক সম্প্রদায়ে বিভক্ত — তারই দুটি অন্যতম বিভাগ হলো — ক্যাথলিজম ও প্রোটেস্ট্যান্টিজম। যে-বাইবেলটি তিনি পড়ে দেখেছিলেন সেটি ক্যাথলিকেরা মেনে চলেন, অন্যদিকে প্রোটেস্ট্যান্টদের অনুসরণীয় বাইবেলে তাঁর স্বপ্নে দেখা সেন্ট জন গসপেলের অনুচ্ছেদটি আছে।
প্রোটেস্ট্যান্ট বাইবেলের একটি কপি জোগাড় করে গুরুদেব এবার গসপেলটি পড়লেন। বিশেষ করে যে-অনুচ্ছেদটির দিকে তিনি ভিতরে ভিতরে তাড়িত হচ্ছিলেন। গসপেলের ঐ অংশটি ছিল কম্ফোর্টার(পরিত্রাতা)-এর অবতরণ বিষয়ে স্বয়ং যীশুর ভবিষ্যদবাণী । একুশ শতকে যুদ্ধ এবং দুর্ভিক্ষজনিত কারণে যে বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেবে তাতে বহুসংখ্যক মানুষ বিধাতার দণ্ডবিধানে শাস্তিভোগ করলেও কম্ফোর্টার সত্যিকারের বিশ্বাসী মানুষদের উদ্ধার করবেন। পরে গুরুদেব জানতে পারেন যে, ‘ওল্ড টেস্টামেন্ট’-এও ভবিষ্যদবক্তা মালাচি যীশুখ্রিষ্টের অবতরণ বিষয়ে ( যাঁকে তিনি ‘এলিজা’ ব’লে সম্বোধন করেছিলেন ) প্রায় একইরকম ভবিষ্যদবাণী করেছিলেন। পবিত্র ধর্মগ্রন্থের ভবিষ্যদবাণী পড়ে গুরুদেব স্পষ্ট বুঝতে পারলেন যে, খ্রিষ্টধর্ম ও ইহুদীধর্মের উৎপত্তিরও হাজার হাজার বছর আগে ‘গীতা’য় ভগবান কৃষ্ণ যে উপদেশ দিয়েছিলেন তার সঙ্গে এর কোনও না কোনও সম্পর্ক বা যোগ আছে।