“ধ্যান গুরু সিয়াগ সিদ্ধ যোগাভ্যাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মন্ত্রজপ ও ধ্যান একই অনুশীলনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ধ্যানের তাৎপর্য কী? বর্তমান বিশ্ব এখন ধ্যানের বিষয়ে অধিকতর আগ্রহী হয়ে উঠছে। কেননা জড়বিজ্ঞানও একথা স্বীকার করেছে যে – ধ্যানের সময় ব্যক্তি সম্পূর্ণ ভাবে একাগ্রচিত্ত হতে পারলে প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতির তুলনায় ধ্যান সম্পূর্ণ রূপে রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে অধিকতর সুফল প্রদান করে।”
“যদিও সেই পরিমাণ মনোযোগ লাভ করা খুবই কঠিন । বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মও ধ্যান কে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে। কিন্তু, তারা ধ্যানকে অতিক্রম করে যাবার কথা কখনোই বলেনি। ধ্যানের উপকারিতা নিয়ে আজকাল আধুনিক সমাজে খুবই উৎসাহ লক্ষ করা যাচ্ছে। চিকিৎসক কিংবা অন্য যে-কেউই এই বিষয়ে অনেক কথা বলছেন। কিন্তু, কেউই প্রকৃত পক্ষে সম্পূর্ণ রূপে এর তাৎপর্য বোঝাতে সক্ষম হননি।”
“প্রকৃত অর্থে ধ্যান হলো- সমাধি লাভের পূর্ববর্তী অবস্থা। মহর্ষি পতঞ্জলি নির্দেশিত অষ্টাঙ্গিক যোগের চূড়ান্ত পর্যায় কে সমাধি বলা হয় । পতঞ্জলি তাঁর সুপ্রাচীন গ্রন্থ ‘যোগসূত্র’-তে ধ্যানের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন। এই গ্রন্থে মহর্ষি পতঞ্জলি যে অনুশাসন গুলি নির্দেশ করেছেন তাতে সাধককে অধ্যাত্ম-সাধনায় আটটি ক্রমিক পর্যায় অতিক্রম করতে হয় : যম ( নৈতিক নিয়মাবলী), নিয়ম ( আত্মশুদ্ধি ও অধ্যয়ন), আসন (অঙ্গবিন্যাস), প্রাণায়াম ( শ্বাসবায়ুর নিয়ন্ত্রণ), প্রত্যাহার (ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণ), ধারণা (লক্ষ্য/একাগ্রতাবৃদ্ধি) , ধ্যান(মেডিটেশান) এবং সমাধি (তদাত্মতা লাভ)।”
“প্রথম পাঁচটি পর্যায় যেখানে বস্তুজগতের সঙ্গে সম্পর্কিত , সেখানে শেষ তিনটি পর্যায় — ধারণা, ধ্যান ও সমাধি সূক্ষ্ম জগতের বিষয়। ধারণার পর্যায়টি সফলভাবে অতিক্রম না করলে সাধকের পক্ষে ধ্যান বা তার পরবর্তী পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব নয়। শুধুমাত্র নিজেকে ধ্যানাবস্থায় কল্পনা করে কখনওই কারও পক্ষে প্রকৃত ধ্যানাবস্থা লাভ করা সম্ভবপর নয়। অন্তর্জগতে সত্যিকারের পরিবর্তন এলে , সেইসঙ্গে কিছু অভিজ্ঞতার সমাবেশ ঘটলে এবং আপনার সমস্যার বাস্তবিক বা জাগতিক সমাধান লাভ হলে পরেই আপনার ‘ধারণা’ ( যা কিনা ধ্যানের ভিত্তিস্বরূপ ) সুদৃঢ় হতে পারে। অর্থাৎ, শুধুমাত্র যখন আপনি অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের সাথে সাথে এইরূপ জাগতিক সমস্ত সমস্যার সমাধান প্রাপ্ত হন , তখনই আপনি সার্থকভাবে ধারণার পর্যায়ে উন্নীত হন। এবং একবার ‘ধারণা’য় দৃঢ় হতে পারলে আপনি ধ্যানের ক্ষেত্রে একাগ্র হতে পারবেন। এই একাগ্রতা লাভের জন্য আপনার মনকে আজ্ঞাচক্রে নিবিষ্ট রাখা জরুরি। সুতরাং, মহর্ষি পতঞ্জলির ব্যাখ্যা অনুসারে ধ্যান হলো সমাধির পূর্বাবস্থা। এবং যখন আপনি একাগ্রতার সঙ্গে ধ্যানে ডুবে যেতে সক্ষম হবেন, স্বাভাবিকভাবেই আপনি সমাধির পর্যায়ে উন্নীত হবেন।”